সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১৬

ইন্টেলের কোর আই সেভেন প্রসেসরঃ অজানা যত কথা

ইন্টেলের সর্বাধুনিক যে প্রসেসরটি এখন সারা বিশ্বকে মাতিয়ে রেখেছে কোর আই-সেভেন। নিঃসন্দেহে এই কোর আই-সেভেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রসেসর। ইন্টেলের ‘নেহালেম প্রসেসর ডিজাইন’ প্রকল্পের আওতায় এই প্রসেসর উদ্ভাবিত হয়। ডেস্কটপ কম্পিউটারে অস্বাভাবিক দ্রুতগতির এই প্রসেসরের বিভিন্ন খুঁটিনাটি,কোর আই-সেভেনের বিভিন্ন ফিচার, এর গঠন ফর্মুলাসহ নানা অজানা কথা 

 core i7 

ইন্টেল কোর আই-সেভেন

কোর আই-সেভেন ইন্টেলের এক্স৮৬-৬৪ ঘরনার তৃতীয় ডেস্কটপ প্রসেসর। প্রথমটি ছিল ইন্টেল নেহালেম মাইক্রোআর্কিটেকচার প্রযুক্তি ব্যবহার করা ইন্টেল কোর ২
সিরিজের প্রসেসর। মূলত কোয়াড কোর প্রসেসর বের করবার পর ব্লুমফিল্ড কোডনেম ধারণ করে কোর আই-সেভেনের কাজ এগিয়ে যায়। ২০০৪ সাল থেকে এই প্রকল্প শুরু হয় এবং ১২০০ প্রকৌশলী ও ডিজাইনার এখানে কাজ করেছেন।  বিশ্বের প্রথম কোর আই-সেভেনটি আলোর মুখ দেখে ইন্টেলের কোস্টারিকা কারখানায়। এরপর ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর এটি প্রথম বাজারে আসে। বর্তমানে ইন্টেলের এরিজোনা, নিউ মেক্সিকো এবং ওরিগন কারখানায় এই কোর আই-সেভেন উৎপাদিত হচ্ছে।
 51

 কোর আই-সেভেনের প্রধান ফিচারসমূহ

এই কথা বলাই বাহুল্য যে, এ পর্যন্ত বিশ্বে যতগুলো প্রসেসর তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে কোর আই-সেভেন সবচেয়ে জটিল উন্নত ডিজাইনের অধিকারী। আর এর নেহালেম আর্কিটেকচারের রয়েছে সম্পূর্ণ নতুন বেশ কিছু ফিচার, যা কোর আই সেভেনকে দিয়েছে স্বকীয়তা। এটি অতিরিক্ত কোনো বিদ্যুৎ খরচ ছাড়াই ৪০ শতাংশ দ্রুতগতিতে ভিডিও এডিটিং, মাল্টিমিডিয়া, হাই-এন্ড গেমিং-এর মতো হাই পারফরম্যান্স কাজ সামাল দিতে সক্ষম। নিচে এক নজারে কোর আই-সেভেনের মূল ফিচারগুলো তুলে ধরা হলো-
>>    সম্পূর্ণ নতুন  এলজিএ ১৩৬৬ সকেট। আগের কোয়াড কোর পর্যন্ত প্রসেসরগুলোতে এলজিএ ৭৭৫ সকেট ব্যবহৃত হতো।
>>   একটিমাত্র সিলিকন চীপের ভেতরেই পূর্ণাঙ্গ চারটি প্রসেসর কোর-এর জটিল এক সমন্বয়।
>>  এই প্রথম হাইপার থ্রেডিং টেকনোলজি ব্যবহার করে একত্রে আটটি কম্পিউটিং থ্রেড সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। আগের পেন্টিয়াম সিরিজের প্রসেসরে এই টেকনোলজি ব্যবহৃত হলেও ডুয়েল কোর থেকে এই ফিচার বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাই কোর আই-সেভেনে চারটি কোর থাকলেও আপনার অপারেটিং সিস্টেম আটটি পৃথক কোর সনাক্ত করতে সক্ষম হবে।
>>    টারবো বুষ্ট টেকনোলজি ব্যবহার করে অধিক সংখ্যক কাজ কোর আই-সেভেন প্রসেসর অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ খরচ করেই করতে সমর্থ হবে। আর প্রসেসর-এর তাপমাত্রা যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে তাও নিশ্চিত করা হয়েছে এর মাধ্যমে।
>>    আগের যে কোনো প্রসেসরের চেয়ে এর মেমোরি ব্যান্ডউইডথ দ্বিগুণ। এই কাজটি করা হয়েছে আগের ফ্রন্ট সাইড বাস টেকনোলজির নতুন সংস্করণ কুইকপাথ টেকনোলজি ব্যবহার করে।
>>   অন ডাই মেমোরি কন্ট্রোলার : প্রতিটি চ্যানেল একটি বা দুটি পর্যন্ত ডিডিআর৩ ডিআইএমএম (র‌্যাম) সাপোর্ট করতে সক্ষম। প্রচলিত মাদারবোর্ডে যেখানে সর্বোচ্চ চারটি র‌্যাম স্লট থাকে সেখানে কোর আই-সেভেন সাপোর্টেড মাদারবোর্ডে থাকবে ছয়টি পর্যন্ত র‌্যাম স্লট। কোর আই-সেভেন প্রসেসর এই পুরো মেমোরির সদ্বব্যবহার করতে সক্ষম। তবে কোর আই-সেভেন প্রসেসর পূর্ববর্তী ডিডিআর২ র‌্যাম সাপোর্ট করে না।
>>   ৩২ কিলোবাইট লেভেল১ ইন্সট্রাকশন বেং ৩২ কিলোবাইট এল১ ডাটা ক্যাশ, প্রতিটি কোরের  জন্য।
>>    ২৫৬ কিলোবাইট লেভেল২ ক্যাশ, প্রতিটি কোরের জন্য
>>   ৮ মেগাবাইট লেভেল৩ ক্যাশ, সবগুলো কোরের জন্য।
>>    সিঙ্গেল ডাই ডিভাইস : চারটি কোর, মেমোরি কন্ট্রোলার ও সব ক্যাশ একটি সিঙ্গেল ডাই-এর মধ্যেই অবস্থিত।
>>   ৪৫ ন্যানোমিটার টেকনোলজি।
>>    প্রতিটি প্রসেসিং কোরে রয়েছে ৭৩১ মিলিয়ন ট্রান্সজিস্টর। আর কোর আই-সেভেনে রয়েছে এরকম চারটি প্রসেসিং কোর বা ইউনিট। অর্থাৎ প্রতি ক্লক সাইকেলে এটি ২.৬৬ থেকে ৩.৩৩ এর চার গুণিতক ক্যালকুলেশন করতে সক্ষম। এর সার্ফেস এরিয়া আগের যে কোনো মডেলের প্রসেসরের চেয়ে বেশি, ২৬৩ মিলিমিটার২, যেখানে আগে ছিল ২১৪ মিলিমিটার২।
>>   এর রয়েছে অত্যাধুনিক পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যার ফলে যখন সিস্টেম কম কাজ করবে তখন প্রয়োজনীয় কোরটি ছাড়া প্রসেসরের বাদবাকী অংশ কোনো বিদ্যুৎ খরচ করবে না।
50

কোর আই-সেভেনের বিভিন্ন মডেল

ইতোমধ্যেই ইন্টেল বের করে ফেলেছে দুই ধরনের কোর আই-সেভেন প্রসেসর। এগুলো হচ্ছে-
১. কোর আই-সেভেন
২. কোর আই-সেভেন এক্সট্রিম এডিশন 
core i72

যেভাবে কাজ করে কোর আই-সেভেন

সাধারণত আমরা কম্পিউটারকে নির্দেশনা দেই কীবোর্ড বা মাউস দিয়ে। এই ডিভাইসগুলোর জন্য সি++ প্রোগ্রামিং ভাষায় তৈরি সাংকেতিক নির্দেশনার সারি আগে থেকেই কম্পিউটারের মেমোরিতে দেয়া থাকে। যখন আপনি কোনো কী প্রেস করেন তখনি কোর আই-সেভেনে প্রতিটি সংকেতকে আলাদা আলাদা ইন্সট্রাকশন কোডে রূপান্তর করতে থাকে। এরপর এই ইন্সট্রাকশনগুলো প্রসেসিং এর পর আরেকটি ইনপুট আউটপুট চ্যানেলের মাধ্যমে আমরা মনিটরে দেখতে পাই। যখন আমরা সাধারণ টাইপ করি বা গান শুনি তখন প্রসেসরে এই ইন্সট্রাকশনের সংখ্যা তেমন বেশি না হলেও যখন আমরা থ্রিডি গেম খেলি বা মাল্টিমিডিয়ার কাজ করি তখন একইসাথে অনেকগুলো ডাটা নিয়ে কাজ করতে হয় প্রসেসরকে। আর তখনি প্রয়োজন হয় গতির। প্রসেসর একই সাথে যত বেশি ক্যালকুলেশন করতে পারে তত দ্রুত কাজ সমাধা হবে। আবার এই কাজের রেজাল্ট পাবার জন্য ডাটা আদান প্রদান হতেও বেশি দ্রুতগতিতে, অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে। নাহলে পুরো সুফল পাবেন না আপনি।
46
 কোর আই-সেভেনে এই সবগুলো ব্যাপার মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ডিজাইন করা হয়েছে যাতে দরকারি মুহূর্তে আপনার পিসি স্লো না হয়ে পড়ে। ফলে প্রফেশনালরা নির্দ্বিধায় তাদের কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন এই সর্বাধুনিক কোর আই-সেভেন।কোর আই-সেভেনে এই সবগুলো ব্যাপার মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ডিজাইন করা হয়েছে যাতে দরকারি মুহূর্তে আপনার পিসি স্লো না হয়ে পড়ে। ফলে প্রফেশনালরা নির্দ্বিধায় তাদের কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন এই সর্বাধুনিক কোর আই-সেভেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন